শেখ হাসিনার সাক্ষাতে ভাগ্য খোলে মনোনয়ন বঞ্চিতদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাঁদের অনুসারীদের সাক্ষাতে শেষ মুহূর্তে বদলে যায় কমপক্ষে ১০টি আসনের প্রার্থী। মনোনয়ন বোর্ডে চূড়ান্ত হওয়ার পর গণমাধ্যমে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ হওয়ায় বঞ্চিতরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তাঁদের বক্তব্য শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাল্টে ফেলেন তাঁর মত। সম্ভাব্য তালিকায় দলীয় প্রার্থী রদবদল করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার বলেছেন, মনোনয়ন দেওয়া মানে চূড়ান্ত নয়। মনোনয়ন দেওয়ার পর মাঠে আবার জরিপ করা হবে। এরপর যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তাঁকে চূড়ান্ত প্রার্থী বলে ঘোষণা করা হবে।

গত সপ্তাহের মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সম্ভাব্য তালিকা থেকে বাদ পড়া দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাঁদের অনুসারীরা। তাঁরা সম্ভাব্য মনোনয়ন পাওয়া নেতা ও ব্যক্তিদের সম্পর্কে কথা বলেন। তুলে ধরেন এলাকার বাস্তব চিত্র। এ সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন শেখ হাসিনা।

মনোনয়নবঞ্চিতদের চোখের পানিতে শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তখনই প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন তিনি। এ নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর ‘আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ক্ষোভ, রদবদল আসছে প্রার্থী তালিকায়!’ শিরোনামে কালের কণ্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সম্ভাব্য তালিকায় নাম ছিল গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২)। এ খবর জানতে পেরে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি জিয়াউর রহমান ও যুবলীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার। শেষ পর্যন্ত এ আসনের মনোনয়ন রদবদল করা হয়। রবিবার দলের চিঠি নিয়ে গেছেন সাবেক এমপি জিয়াউর রহমান।

সম্ভাব্য তালিকায় নাম ছিল বর্তমান এমপি আবদুল মালেকের (নওগাঁ-৫)। তা দেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন। শেষ পর্যন্ত আবদুল মালেককে বাদ দিয়ে নিজাম উদ্দিন জলিল জনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান এমপি গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলনের (সিরাজগঞ্জ-৩) নাম ছিল সম্ভাব্য তালিকায়। এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাইদুল ইসলাম খান পল। তিনি গত বৃহস্পতিবার গণভবনে গিয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চান। পল ওই আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুল আজিজ।

সম্ভাব্য তালিকায় নাম ছিল বর্তমান এমপি আবদুর রউফের (কুষ্টিয়া-৪)। গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। এরপর গণভবনে ছুটে আসে তাঁর প্রতিপক্ষরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে এ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের অনুরোধ করে। গত রবিবার সেলিম আলতাফ ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি নিয়ে গেছেন।

বর্তমান এমপি মীর শওকত আলী বাদশার (বাগেরহাট-২) নাম ছিল সম্ভাব্য তালিকায়। তাঁর নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর গণভবনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশ কজন সদস্য। তাঁরা এমপি শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়কে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন মীর শওকত আলী বাদশা। মনোনয়ন পেয়েছেন এমপি শেখ হেলালপুত্র শেখ তন্ময়।

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা-৫ আসনের বর্তমান এমপি। সম্ভাব্য তালিকায় তাঁর নাম ছিল। গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়। এরপর আকতারুজ্জামান বাবু ও তাঁর সমর্থকরা গণভবনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। শেষ পর্যন্ত নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাদ পড়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছেন আকতারুজ্জামান বাবু।

তিনি দলের চিঠি নিয়ে গেছেন। সম্ভাব্য তালিকায় নাম ছিল বর্তমান এমপি, সাবেক ছাত্রনেতা আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের (পটুয়াখালী-৩)। গণমাধ্যমে তাঁর নাম প্রকাশিত হলে এলাকার নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করে। তারা দেখা করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে। এরপর আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে বাদ দিয়ে এস এম শাহজাদাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (নরসিংদী-৩) জয় লাভ করেন। পরাজিত হন সাবেক এমপি জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন। সম্ভাব্য তালিকায় এবার সিরাজুল ইসলাম মোল্লার নাম ছিল। গত বুধবার গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন। তিনি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার পরিবর্তে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। রবিবার দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন।

নানা নাটকীয় ঘটনার জন্ম দিয়ে সমালোচিত উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় (নেত্রকোনা-২)। আবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে তাঁর নাম প্রকাশিত হয়। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে নেত্রকোনাজুড়ে। গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন মনোনয়নপ্রত্যাশী আশরাফ আলী খান খসরু। শেষ পর্যন্ত জয় বাদ পড়েন। মনোনয়ন পেয়েছেন আশরাফ আলী খান খসরু।

ঢাকা-৪ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা। এ আসনটি আবারও মহাজোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত বুধবার গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কোহিনুর বেগম।

তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন আবু হোসেন বাবলা। সেই নেতাকর্মীরা নির্বাচনে কিভাবে তাঁর পক্ষে কাজ করবে? রবিবার এ আসনে মনোনয়নের চিঠি নিয়ে গেছেন হারুনুর রশীদ।–কালের কন্ঠ